তারাবিহ বনাম তাহাজ্জুদ বিতর্কের দালিলিক সমাধান

 

যুগ যুগ ধরে চলে আসা দুটি ভিন্ন আমল নিয়ে বিতর্ক হবে এবং সেই বিতর্কের সমাধানে কলম ধরবো তা কখনোই কল্পনা করতে পারিনি। যখন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ইসলাম এর উম্মতগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে আর আমার নিকটে স্পষ্ট দলিল প্রমাণ থাকবে তারপরও আমি কিছুই বলবো না বা লিখব না তা তো হতে পারে না। তাই পাঠক সমীপে কোরআন ও হাদিসের আলোকে তাহাজ্জুদ ও তারাবির ভিন্নতা নিয়ে কিছু দলিল ও যুক্তি পেশ করছি। তাহাজ্জুদ কি? তাহাজ্জুদ কোরআন মাজীদ দ্বারা প্রমাণিত। সূরা মুসাম্মিলের 2,3 ও 20 নম্বর আয়াত দ্রষ্টব্য। ২ নং আয়াতের মাধ্যমে তাহাজ্জুদ নামাজ কে ফরজ করা হয়েছে। এক বছর পর ২০ নম্বর আয়াত নাজিল করে ফরজিয়াতকে রহিত করেছেন এবং পুরা বছরের জন্য এই উম্মতের উপর তাহাজ্জুদের নামাজকে নফল করেছেন। সূরা মুজাম্মিল নাযিল হয়েছে হিজরতের বহু পূর্বে মক্কা মুকাররামায়। পক্ষান্তরে রমজানের রোজা ফরজ হয়েছে দশম হিজরীতে। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা এই মাসের রোজা কে তোমাদের উপর ফরজ করেছেন এবং এই মাসের রাতের নামাজকে অর্থাৎ তারাবিকে সুন্নাহ করেছি। নাছায়ী-ইবনে মাজাহ। এখানে আমরা দুইটি পার্থক্য জানতে পারলাম একটি হল তাহাজ্জুদের ব্যাপারে কোরআন মাজিদে স্পষ্ট আয়াত রয়েছে এবং পুরা বছর এই নামাজ আদায় করা নফ


ল হিসাবে গণ্য হবে। অন্যদিকে তারাবির ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে রমজানের কথা উল্লেখ করেছেন। তারাবি এবং তাহাজ্জুদ দুইটা ভিন্ন আমল তা সহজেই অনুমান করা যায়। বুখারী শরীফে-২০১০ বর্ণিত আছে সাহাবা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম রমজানে রাতের প্রথম অংশে তারাবির নামাজ পড়তেন, হযরত ওমর রাযিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বললেন, এই নামাজ অর্থাৎ তারাবি থেকে ওই নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ উত্তম, যে সময় মানুষ ঘুমিয়ে থাকে। আসলে যারা তাহাজ্জুদ এবং তারাবিকে এক করে গুলিয়ে ফেলেন, তাদের আসলে অজ্ঞতা রয়েছে আর না হয় বুখারী শরীফের হাদিসকে অস্বীকার করে শেষ সম্বল টুকু হারিয়েছে। কারণ এই সমস্ত হাইব্রিড শায়েখরা হাদিসের নামে জালিয়াতি করে শুধুমাত্র বুখারী শরীফকে মেনে চলেন আর এখানে বুখারী শরীফের হাদিসই তাদের বিরুদ্ধে চলে গেছে। এবার চলুন স্বয়ং ইমাম বুখারী রহ: এর আমল কি ছিল তা জেনে আসি। ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তাহাজ্জুদ ও তারাবি পৃথকভাবে আদায় করতেন। যেমনটি মোকাদ্দামায়ে ফাতহুল বারিতে উদ্ধৃত হয়েছে। তারিখে বাগদাদে ২/১২ বর্ণনা আছে। রাতের প্রথম ভাগে তারাবি পড়তেন আর শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ পড়তেন। তারাবির প্রত্যেক রাকাতে ২০ আয়াত তেলাওয়াত করতেন এবং এভাবেই তারাবিতে কোরআন মাজীদ খতম করতেন। আরো কিছু পার্থক্য

১.সাহাবায়ে কেরাম তারাবি প্রকাশ্যে পড়েছেন আর তাহাজ্জুদ গোপনে পড়েছেন।

২. শুধুমাত্র রমজানে তারাবি আদায় করা সুন্নত আর পুরা বছর তাহাজ্জুদ আদায় করা নফল।

৩. রমজানে তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া আর তাহাজ্জুদের জামাত নেই।

৪. সাহাবা একরাম তারাবি প্রথম রাত্রে পড়েছেন আর তাহাজ্জুদ শেষ রাত্রে পড়েছেন কেননা তখন অধিকাংশ লোকই ঘুমিয়ে থাকে।

৫. তারাবির অর্থ হলো বিশ্রাম বা আরাম আর তাহাজ্জুতের অর্থ হলো ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া।

৬. অধিকাংশ তাফসীরবিদগনের মতে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া ব্যতীত তাহাজ্জুদ আদায় হয় না- তাফসিরুল আকাম-১/৩৭২

৭. আরবি ভাষায় ঘুমন্ত ব্যক্তিকে হাজিদ বলা হয় আর যে ঘুম থেকে জাগ্রত হয় তাকে মুতাহাজ্জিদ বলা হয় অর্থাৎ তাহাজ্জুদ পড়নেওয়ালা।

৮. হারামাইন শরিফাইনে অর্থাৎ কাবা শরীফ ও মসজিদে নববীতে শুধুমাত্র রমজান মাসেই 20 রাকাত তারাবি পড়া হয় এবং এটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। যদি তাহাজ্জুদ ও তারাবি একই নামাজ হতো তাহলে শুধু রমজান মাসে তারাবি পড়া হতনা। পুরা বছরই তারাবি পড়া হত।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url