যাকাতের গুরুত্ব ও মাসায়েল (দ্বিতীয় পর্ব)

 প্রথম পর্বের পর থেকে•••••


কাদের উপরে যাকাত আদায় করা ফরজ

১. মাসয়ালা:প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মস্তিষ্ক সকল স্বাধীন মুসলিম নর নারী যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হন তাহলে তার উপর যাকাত আদায় করা ফরজ। দুররুল মুখতার-২/২৫৯ বাদায়েউস সানায়ে-২/৭৯

যাকাতের নিসাব

২. মাসয়ালা: কারো কাছে যদি বিশ মিসকাল বা আধুনিক হিসাব মতে সাড়ে সাত ভরি সোনা থাকে এবং  ২০০ দিরহাম যা আধুনিক হিসাব মতে সাড়ে ৫২ তোলা রুপা থাকে অথবা প্রয়োজনীয় খরচ খরচা বাদ দিয়ে উল্লেখিত সোনা রুপার পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ থাকে তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে। সহি বুখারী-১৪৪৭ আবু দাউদ-১/২২১

৩. মাসয়ালা: আধুনিক হিসাব মতে সাড়ে ৫২ তলা রুপা বা এ পরিমাণ অর্থ থাকলে যাকাত ফরজ হবে। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৬৭৯৭-৬৮ 

৪. মাসয়ালা:কারো কাছে যদি নিসাবের কম রুপা থাকে আর উদ্ধৃত টাকা থাকে যা একসাথে করলে সাড়ে ৫২ তলা রুপার পরিমাণ হয় তাহলে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে। দুররুল মুখতার ২/৩০৩

৫.মাসয়ালা: তেমনি ভাবে কারো কাছে কিছু সোনা আছে যা নিসাবের পরিমাণ নয় এবং কিছু বাণিজ্য দ্রব্যাদি আছে তাহলে দেখতে হবে একত্র করলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমপরিমাণ হয় কিনা যদি হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে। রদ্দুল মুহতার

৬.মাসয়ালা: কারো কাছে সোনা রুপা টাকা পয়সা নিসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে আরো কিছু যোগ হল। তাহলে বছর শেষে আগের সম্পদের সাথে মাঝে পাওয়া সম্পদের হিসাব করে যাকাত দিতে হবে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-১০৩২৫-২৭

নিসাব পরিমাণ সম্পদের থেকে কতটুকু অংশ যাকাত দিতে হবে।

৭.মাসয়ালা: যে সম্পদ নিসাব পরিমান হয়ে যায় তার 40 ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই টাকা হাজার 25 টাকা লাখের আড়াই হাজার টাকা হারে নগদ টাকা পয়সা বা ওই মূল্যের কাপড় বা অন্য কোন হালাল সামগ্রী দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। আবু দাউদ-১৫৭২ তিরমিজি-৬২৩

কি কি জিনিসের উপর যাকাত ফরজ হয়

৮. মাসয়ালা: ব্যবসার পণ্য সোনারূপা চাই ব্যবহার হোক অথবা না হোক টাকা পয়সা ও পালিত পশুর উপর যাকাত ফরজ হয়। আবু দাউদ ১/২৫৫ সুনানে নাসাঈ হাদিস নং-২২৫৮

৯.মাসয়ালা: প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা পয়সা নেসাব পরিমাণ হলে এবং সেটা যদি ১ বছর অতিবাহিত হয় তাহলে তার যাকাত আদায় করা ফরজ। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৭০৯১-৯২ 

১০.মাসয়ালা: হীরা, মনি- মুক্তার উপর যাকাত ফরজ নয়। তবে যদি এগুলি ব্যবসার উদ্দেশ্যে থাকে তাহলে যাকাত ফরজ। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-৬/৪৪৭-৪৮টা

১১.মাসয়ালা: টাকা পয়সা ব্যবসা বা অন্য কোন কাজে ব্যবহার না করে রেখে দিলে, বছর শেষে তার যাকাত আদায় করতে হবে। দুররুল মুখতার ২/২৬৭

১২.মাসয়ালা: ছেলে মেয়ের বিয়ে-শাদী, ব্যাংক ব্যালেন্স, ফিক্সড ডিপোজিট বা হজের জন্য টাকা পয়সা জমা করলেও তার ওপর বছর অতিক্রান্ত হলেই যাকাত ফরজ হবে। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৭০৩২

১৩.মাসয়ালা: দোকানে বা মার্কেটে যা রাখা থাকে অর্থাৎ বাণিজ্য দ্রব্য, এগুলির উপরেও মূল্য নিসাব পরিমাণ হলেই যাকাত ফরজ হবে। সুনানে আবু দাউদ১/২১৮ সুনানে কোবরা বায়হাকী-৪/১৫৭

১৪.মাসয়ালা: ব্যবসার উদ্দেশ্যে যে কোন কিছুর ক্রয় করলে যেমন জমি, গাড়ি, অলংকার, ফার্নিচার, বই পুস্তক, কাপড়, মুদী মালামাল ইত্যাদি সবগুলিই বাণিজ্য দ্রব্যাদি বলে বিবেচিত হবে। এগুলি নিসাব পরিমাণ হলেই যাকাত ফরজ হবে। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৭১০৩-০৪

১৫.মাসয়ালা: ব্যবসার মূলধনের উপর যাকাত ফরজ কিন্তু যদি মূলধনের বছর অতিক্রম হওয়ার আগেই অন্য কোন ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে ফেলে তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবেনা। রদ্দুল মুহতার ২/২৬৮

১৬.মাসয়ালা: কাউকে ঋণ দিলে এবং ওই ঋণের টাকা নিসাব পরিমাণ হলে, তারও যাকাত দিতে হবে। বাদাউস সানায়ে-২/১০

১৭.মাসয়ালা: দোকানে বাকি টাকা হিসাব করে দেখতে হবে যদি নেসাব পরিমাণ টাকা বাকিতে থাকে তাহলে হাতে আসার পর তার যাকাত দিতে হবে। হা যদি বাকিতে থাকা অবস্থায় যাকাত আদায় করে দেয় তাহলেও হয়ে যাবে। ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া -২/৬

১৮.মাসয়ালা: জমি বন্ধক এর বিনিময়ে প্রদত্ত টাকা জমির মালিকের মালিকানাধীন নয়। বরং  বন্ধকগ্রহীতা তার প্রকৃত মালিক। তাই জমির মালিকের উপর উক্ত টাকার যাকাত দেওয়া জরুরি নয়। বরং করজদাতা নিসাবের মালিক হলে তার ওপর উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা ফরজ হবে। আল বাহারুর রায়ক ২/৬০৮

১৯.মাসয়ালা: দোকানে বা মার্কেটে ব্যবসার মাল ব্যতীত অন্য কোন আসবাবের উপর যাকাত আসবে না। যেমন ডেকোরেশনের আসবাব। কিন্তু যদি ডেকোরেশন এর মধ্যে সোনা রুপার কোন জিনিস থাকে তাহলে শোনার রুপার যাকাত দিতে হবে। ফাতোওয়ায়ে মাহমুদিয়া ৩/৫৩

২০.মাসয়ালা: স্বামীর থেকে মোহরানা বুঝে পাওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ হস্তগত না হওয়ার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর উপর যাকাত ফরজ নয় যদিও তা নিসাব পরিমাণ হয় আর যদি আগ থেকেই স্ত্রীর অন্য কোন সম্পদ যাকাতের উপযুক্ত থাকে আর এখন মোহরানার টাকাও যোগ হয় তাহলে পূর্বের সম্পদের সাথে মোহরানার  টাকা যোগ করে যাকাত দিবে। কিন্তু যদি আগ থেকে তার সম্পদ যাকাতের উপযুক্ত না থাকে, আর এখন হস্তগত হলে, যেদিন হস্তগত হবে সেদিন থেকে বছর গণনা শুরু করবে। এক বছর হলেই যাকাত প্রদান করবে।

২১.মাসয়ালা: যাকাতের বছর গণনা হয় চন্দ্র বর্ষের হিসাব অনুযায়ী সৌর বর্ষের নয়।

২২.মাসয়ালা: যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাত প্রদানের নিয়ত করা জরুরি রদ্দুল মুহতার ২/২৫৮

২৩.মাসয়ালা: নিসাব পরিমাণ মাল যেদিন বছর পূর্ণ হবে সেদিনই যাকাত ফরজ হবে। যদিও অন্য সময় যাকাত আদায় করুক না কেন, ওই পরিমাণই যাকাত আদায় করতে হবে। মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ১০৫৫৯

২৪.মাসয়ালা: ভাড়ার ঘরবাড়ি, দোকানপাট বা মার্কেটের উপর যাকাত ফরজ নয়। তবে তার থেকে অর্জিত ভাড়ার টাকার উপর যাকাত ফরজ হবে।

২৫.মাসয়ালা: পাওনা টাকা উসুল হতে ২০ বছর সময় অতিবাহিত হলেও উসুল হওয়ার পরে বিগত বছরের যাকাত দিতে হবে। মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক-৭১১৬-২৯-৩১

২৬.মাসয়ালা: ভাড়া দেয়ার জন্য গাড়ি-বাড়ি, ফ্যাক্টরি, মেশিন, ইত্যাদি থেকে লব্ধ ভাড়ার টাকা নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত ফরজ হবে। মাসায়েলে যাকাত ১৬১

২৭.মাসয়ালা: ও সম্পদ সমান সমান হলে যাকাত ফরজ নয়। কিন্তু ঋণ পরিশোধ করার পর যা বেঁচে থাকবে তা যদি হিসাব পরিমান হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে।হিদায়া ২/৬

২৮.মাসয়ালা: ব্যবসা বা উন্নয়নের জন্য ঋণ নিলে যাকাত দেওয়ার এসব ঋণ ধর্তব্য নয়। যেমন: ঘরবাড়ি, দোকানপাট, মার্কেট, কারখানা ইত্যাদি

বাকি অংশ তৃতীয় পর্বে দেখুন




 



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url