ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত


মহান আল্লাহতালার ঘরে একান্ত মনোযোগের সাথে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে তার নৈকট্য হাসিলের এক বিশেষ আমলের নাম হলো এতেকাফ।নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহতালা এতেকাফকারীকে তার নিবেদিত বান্দা হতে  সহায়তা করেন। তাছাড়া এতেকাফ কারী নিজের সমস্ত আবেগ ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্ট ও মহাব্বত অর্জনে মগ্ন থাকেন।

এতেকাফ এর অর্থ কি?

এতেকাফের আভিধানিক অর্থ: নিরবিচ্ছিন্ন হওয়া বা অবস্থান করা।

শরীয়তের পরিভাষায় ইতিকাফের অর্থ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াবী সমস্ত ব্যস্ততা থেকে নিজেকে নিরবিচ্ছিন্ন রাখা।

ইতিকাফ কয় প্রকার?

ইতিকাফ তিন প্রকার

এক: ওয়াজিব এতেকাফ। যা মান্নতের এতেকাফ যেমন কেউ মান্নত করল আমার মা সুস্থ হলে আমি তিন দিন ইতেকাফ করব। আরেকটি হলো সুন্নত ইতিকাফ যদি কোন কারণে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তার কাজা স্বরূপ ইতিকাফ করা ওয়াজিব।


দুই: নফল ইতিকাফ: বছরের যে কোন সময় যে কোন মসজিদে এতেকাফের নিয়ত করে মসজিদে প্রবেশ করা।


তিন: সুন্নতে মুয়াক্কাদা, ইতিকাফ: যা ২০ রমজান সূর্যাস্তের আগে মসজিদে প্রবেশ করে ঈদের চাঁদ দেখার আগ পর্যন্ত অবস্থান করাকে বোঝায়।

ইতিকাফ কোথায় করব?

পুরুষের জন্য ইতিকাফ করার সবচেয়ে উত্তম জায়গা হল মসজিদে হারাম মসজিদে নববী ও মসজিদে আকসা তারপর জামে মসজিদ ও পাঞ্জেগানা মসজিদ। আর মহিলাদের জন্য ঘরের একটি পবিত্র স্থান যা ইতিকাফ করার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়।

ইতিকাফের গুরুত্ব ও ফজিলত।

ইতিকাফের এ হুকুম প্রাচীনকালের অর্থাৎ হযরত ইব্রাহিম ও হযরত ইসমাইল আ: জামানার। যেমনিভাবে মহান আল্লাহতালা কুরআন মাজিদের মধ্যে এরশাদ করেন, আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম তোমরা আমার ঘরকে সেই সকল লোকদের জন্য পাক-পবিত্র কর, যারা তাওয়াফ করবে, ইতিকাফ করবে আর রুকু ও সেজদা করবে। সুরা বাকারা আয়াত ১২৫ এর দ্বিতীয় অংশ

হুজুর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পর একটি রমজান ব্যতীত সকল রমজানে ইতিকাফ করেছেন। এবং সাহাবারা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ইতিকাফে শরীক থেকেছেন। যে রমজানে তিনি ইতিকাফ করতে পারেননি ওই রমজানের ইতিকাফের জন্য পরবর্তী রমজানে ১০ দিনের ইতেকাফের বদলে ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন। আবু দাউদ -২৪৬৩


অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ ১০ দিন শবে কদর লাভ করার জন্য এতেকাফ করেছেন। কেননা শবে কদর শেষ ১০ দিনের রাতে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু ইসলাম আরও এরশাদ করেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকে শবে কদর তালাশ করো। সহি বুখারী-২০২০


হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ইতিকাফকারী সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য এত বেশি নেকি লেখা হয় যেন, স্বয়ং সে সকল প্রকার ভাল কাজ করেছে। যেমন জানাজায় শরিক হওয়া, রোগীর সেবা-যত্ন করা, ভালো কাজের আহবান করা ইত্যাদি। মিশকাত শরীফ


এক হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার রাজি খুশি করার জন্য একদিন এতেকাফ করে, তার ও দযোখের মধ্যে তিনটি খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আর এক খন্দকের দূরত্ব আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থান হতেও বেশি। -তীবরানি


আল্লামা শারানি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন রমজানে একদিনের ইতিকাফে দুই হজ ও ওমরাহ এর সাওয়াব পাওয়া যায়। এবং যে ব্যক্তি জামাতের মসজিদে মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত ইতিকাফ করলো ও জিকির এবং তেলাওয়াত করল তার জন্য জান্নাতে একটি বালাখানা তৈরি করা হয়।



লেখক: মুফতি মাসুম বিল্লাহ 



 


 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url